
প্রশিক্ষণের অভাবে থমকে আছে ব্লক ইটের ব্যবহার
- আপলোড সময় : ১৫-০৫-২০২৫ ০২:২৪:২৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৫-২০২৫ ০২:২৪:২৮ অপরাহ্ন


রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেও খুলনায় এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট। সরকারি পর্যায়ে গৃহীত কিছু প্রকল্পে সীমিতভাবে এই ইট ব্যবহৃত হলেও, বেসরকারি নির্মাণকাজে এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। সরবরাহ ঘাটতি এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার অভাবে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার থমকে আছে বলে মনে করছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ব্লক ইটের বাজার এখনো সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই সীমিত হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিকরাও ব্লক ইট ব্যবহারে অনভিজ্ঞ হওয়ায় এই ইট ব্যবহারের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এখনো এই ইটের উপকারিতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় অনেকে এটি ব্যবহারে আগ্রহ দেখান না।
জানা গেছে, সিমেন্ট, বালু ও পাথর দিয়ে ব্লক ইট তৈরি হয়। বাজারে সলিড হলো ও দুই ধরনের ব্লক ইট পাওয়া যায়। তবে খুলনার বাজারে ব্লক ইট বিক্রি হচ্ছে না। যশোরের নিটল নিলয় কোম্পানি এবং জননী ব্লকার কোম্পানি ব্লক ইট তৈরি করে। খুলনাতে খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই ইট ব্যবহারের প্রবণতা শূন্যের কোটায়। সলিড ব্লক ইট প্রতি হাজার ১৭-১৮ হাজার টাকা এবং হলো ব্লক প্রতি হাজার ৪৫-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সলিড ব্লক ইট আকারে ছোট হয় এবং হলো ব্লক ইট আকারে বড় হয়। হলো ব্লকের একটি ইট সাধারণ প্রায় ৫টি ইটের সমান হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, খুলনার গণপূর্ত-২ এর আওয়াতাধীন খুলনায় কর ভবন নির্মাণ প্রকল্প, পাইকগাছা আকলিমা খাতুন ভকেশনাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ ও পিএসসি ভবন নির্মাণ কাজে শতভাগ ব্লক ইটের ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিজ্ঞ শ্রমিকরা সাধারণত এই ধরনের কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করেন। কিন্তু নতুন শ্রমিকরা প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সমস্যা অনুভব করেন। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা না থাকলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। উল্টো কাজের গুণগত মান কমে যেতে পারে। তবে হলো ব্লক ইটের ব্যবহার খুলনায় এখন পর্যন্ত হয়নি। হলো ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়াতে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
খুলনার নির্মাণাধীন কর ভবনে কর্মরত রাজমিস্ত্রী রুস্তম শেখ বলেন, এই প্রথম তিনি সলিড ব্লকের কাজ করছেন। সাধারণ ইটের থেকে সলিড ব্লক ইট ব্যবহার অনেক সহজ। আকারে ছোট হওয়াতে ধরতেও সুবিধা। এই ইট ব্যবহার করে বিল্ডিং গাঁথুনি দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ব্লক ইট ব্যবহারে নির্মাণকাজে সিমেন্ট ও বালিও কম লাগে। এছাড়া কাজের ফিনিশিং ভালো হয়।
অন্য এক রাজমিস্ত্রি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি প্রথমবারের মতো সলিড ব্লক ইট দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ করছেন। তবে ব্লক ইট ব্যবহারে সুবিধা অনেক। সিমেন্ট কম লাগে, গাঁথুনিতে সময় কম লাগে। কাজের মানও ভালো হয়। আবার ব্লক ইট বহনে ও ধরতেও সুবিধা আছে।
রাজমিস্ত্রি কবির হোসেন জানান, ১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি ব্লক ইটের কাজ করেছেন একবার। সলিড ব্লক ইট ছোট। পোড়া ইটে যে কৌশল অবলম্বন করতে হয়, এই ইটেও তাই। তবে প্রথমে একটু সমস্যা হলেও এখন সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, সলিড ব্লক ইট সিমেন্ট বালি দিয়েই তৈরি হয়। এজন্য ফিনিশিং আর গাঁথুনিতে সিমেন্ট বালি কম লাগে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা জেলা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, প্রচলিত পোড়া ইটের পরিবর্তে ব্লক ইট ব্যবহার করলে কার্বন নির্গমন হ্রাসসহ কৃষি জমি রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া সরকারের পরিবেশবান্ধব নির্মাণে ব্লক ইট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজরদারির অভাব এবং নীতিগত সহায়তা না থাকায় উদ্যোগটি কাক্সিক্ষত গতিতে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, ট্রেডিশনাল ব্যবসায়ীদের ব্লক ইটের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। পাশাপাশি রাজমিস্ত্রিদের ব্লক ইট ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিষয়টি সহজতর হলে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়বে।
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের জোনের আওয়াতাধীন তিনটি প্রকল্পে ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্লক ইট ব্যবহারে টেকসই নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি আমরা। এসব প্রকল্পে সলিড ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে হলো ব্লক ইট এখনই ব্যবহার করা হচ্ছে না। হলো ব্লক ইট ব্যবহারে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ একটা নির্দিষ্ট অংশ পর পর হলো ব্লক ইটের মাঝে রড দিয়ে গাঁথুনি দিতে হয়।
পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্লক ইট তৈরি করা হয়। ব্লক ইট ব্যবহারে পরিবেশের ওপর থেকে বিরূপ প্রভাব দূর করা সম্ভব। উদ্যোক্তারা চাইলে ব্লক ইট তৈরিতে এ সময় বিল্পব ঘটাতে পারেন। ব্লক ইট তৈরি পরিবেশের ক্ষতি করে না, বিধায় যেকোনো জায়গাতেই কারখানা করা যেতে পারে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ